আজ রবিবার, ১৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দমানো যাচ্ছে না সোর্সদের অপরাধ!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফতুল্লা
পুলিশকে অপরাধীদের ধরতে গেলে সোর্সের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পুলিশকে সহযোগিতার নামে যদি সোর্সরাই নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে সাধারন জনগনের ভোগান্তির কোন শেষ থাকেনা। মাদক ও অপরাধ নির্মুলে পুলিশের পাশাপাশি সোর্সদের ভুমিকাও কোন অংশে কম নেই কিন্তু পুলিশের সাথে প্রচুর সখ্যতা থাকার সুবাদে সোর্সরাই এখন ফতুল্লা থানা এলাকাতে বিভিন্নস্থানে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাদকের স্পট ও সিন্ডিকেট। এ যেন শর্ষের ভেতরে ভুতের বসবাস ? ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় কথিত সোর্সদের অনৈতিক কর্মকান্ডগুলো সাধারন মানুষের মাঝে নাভিশ্বাসের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ডিউটিবিহীন কতিপয় পুলিশ সদস্যরা সিএনজি বাহিনীর মাধ্যমে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতিবিহীন চালাচ্ছে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান। অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের চাইতে ব্যবহার করছে নিয়োজিত সোর্সদের। সোর্সদের নিকট অবৈধভাবে হ্যান্ডকাপ প্রদান করে ফতুল্লা থানার তালিকাভূক্ত বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে সক্ষম হলেও অবৈধপন্থায় অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ফলে একদিকে যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে পুলিশের ভাবমূতি সে সাথে ফতুল্লা মডেল থানার বিচক্ষন অফিসার ইনচার্জ কামালউদ্দিনের অর্জিত সুনাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিযানের নামে সিএনজি বাহিনীর অভিযান বন্ধ করাসহ সোর্সদের দৌরাত্ব বন্ধের জন্য জেলা পুলিশ সুপার মঙ্গনুল হক এবং ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনের জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পুলিশকে একটি কাজ দিতে পারলেই শতকরা ২০ ভাগ অর্থ পাওয়া যায় অথ্যাৎ প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা। সম্পুর্ন বিনে পয়সার এ ব্যবসাটি অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই লুফে নিচ্ছে সোর্স নামধারী চিহিৃত অপরাধীরা। ফতুল্লা থানাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায় ব্যতিক্রমধর্মী অনেক কথাবার্তা। মাসদাইর বাজার ও আশপাশে সোর্স নাসির ওরফে কসাই নাসির স্থানীয়দের মাঝে আতংকের একটি নাম। পুলিশের সোর্সের পাশাপাশি মাসদাইর রোকেয়া স্কুলের পাশেই তার মেয়ে সালমা,ছেলে সেলিম ও রাসেলের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক মাদকের আখড়া। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হলেই বিনা অপরাধে গুনতে হয় প্রচুর টাকা অথ্যাৎ পুলিশ দিয়ে সাধারন প্রতিবাদীকে ধরিয়ে দিয়েই টাকা আয়ের হাতিয়ার বানিয়ে নেয়। শনিবার ( ৯ ডিসেম্বর) তেমনী এক প্রতিবাদী যুবককে গুনতে হয়েছে ১৪ হাজার টাকা,আরেক যুবককে গুনতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। কসাই নাসিরগংদের মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই কসাই নাসির তার নিজস্ব এসআই দিয়ে দুই যুবককে শায়েস্তা করে কসাই নাসির। লামাপাড়া শিবু মার্কেট এলাকাবাসীর জন্য আতংকের এক নাম শিবু ওরফে সোর্স শিবু। ফতুল্লা থানার স্পেশাল টিম এনামুলের সাথে থাকা রামারবাগ এলাকার মৃত.গিয়াসউদ্দিন মেম্বারের ছোট ছেলে সোর্স শিবু দ্বারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি শিবু মার্কেট ও আশপাশের কেউ বলতে পারবেনা। শিবুর নেতৃত্বে শিবু মার্কেট ও আশপাশের মাদক বিক্রেতাদের না ধরিয়ে দিয়ে সাধারন সেবনকারীকে ধরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শিবু ও পুলিশের অসাধু সদস্যরা। তাদের অনেকের মতে সোর্সরাই যেন প্রজাতন্ত্রের দেশে নিরীহদেরকে হয়রানী করার জন্য আরেকটি বাহিনী যা কিনা শুধু অসাধু পুলিশরাই নিয়ন্ত্রন করে থাকেন তাদের আর্থিক সুবিধার্থে।
সূত্রে জানা যায়, যেই পুলিশ সোর্স দিয়ে অপরাধ দমন করা হয় সেই পুলিশ সোর্সরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কার্যত এখন পুলিশ সোর্সরাই চালাচ্ছে ফতুল্লা থানার কার্য্যক্রম। ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ কর্মকর্তারা হয়ে পড়ছেন সোর্স নির্ভরশীল। ফতুল্লাা পুলিশের সোর্সদের দৌরাত্ব হয়রানি, চাঁদাবাজি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুন্ন হচ্ছে। সোর্সদের দৌরাত্বে থানার কার্যক্রম বেহাল হয়ে পড়েছে। ফতল্লা থানার সোর্সরাই এখন বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দেন। আর এ ক্ষেত্রে থানা এলাকার সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
এলাকার ফুটপাথের দোকান থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল নিয়ে মধ্যস্থতা, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায়,সোর্সদের দাবিকৃত মাসোয়ারা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো এমনকি সোর্সদের মধ্যস্থতায় ছাড়ানো থেকে শুরু করে সব ধরনের সিদ্ধান্তই নিচ্ছে সোর্সরা। ফতুল্লা থানার এলাকা গুলোতে এখন পুলিশের চেয়ে সোর্সদের দৌরাত্ব বেশি হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে এই সোর্সরাই থানার ওসির ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেক সোর্স মামলার আসামিদের পক্ষ নিয়ে পুলিশের নাম পরিচয় ব্যবহার করে বাদীকে হুমকি দেন। মূলত থানা চালাচ্ছেন পুলিশ সোর্সরা এমনটাই অভিযোগ ফতুল্লার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন। ফতুল্লা থানা এলাকার যে সকল সোর্সদের দৌরাত্ব বেশি তাদের মধ্যে অণ্যতম ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার সুরুজ্জামান ওরফে চায়না, পারভেজ, জাহাঙ্গীর, রাসেল, ফতুল্লা থানা গেইট এলাকার জুয়ারী জাফর, ভোলাইল এলাকার ওয়াসিম, কাদির, নবীনগরের সাদ্দাম, শাহাদাত, ফাজিঁলপুর এলাকার দস্তোগি, নূরা, আবু, পঞ্চবটি বস্তি এলাকার আবুল, সাগর, হরিহর পাড়া আমতলা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে পুলিশ সোর্স আকাশ, পাপ্পু, শান্তিনগর এলাকার, শান্ত, ভোলাইল এলাকার জলিল, কাদির, ওয়াসিম, সহিদ, মাসদাইর এলাকার দিলীপ, ল্যাংড়া মান্নান ওরফে চরমপন্থী মান্নান, শান্ত, কাইল্যা রিপন,নাসির হোসেন ওরফে কসাই নাসির, পাগলা এলাকার লিয়াকত, আনার, আলমগীর, লিটন, লালখা, সেহাচর, রামারবাগ ও শিবুমার্কেট এলাকার নাসির, লিমন, সাথী, জাহাঙ্গীর,শিবু ,ধর্মগঞ্জ এলাকার আলম, হাসান, জহির, রবিউল, কাশিঁপুর এলাকার মাহাবুব, শাহীন, পঞ্চবটি এলাকার পাপ্পু, জাহাঙ্গীর, কাইল্যা মাহাবুব, ইব্রাহীম, আবু, বোছা সোহেল, এতিম খানা এলাকার সাদ্দাম, শাহাদাত, খলিল, নাছির, নবীনগর এলাকার সফিক, বক্তাবলী এলাকার আলমগীর, রাসেল, শাহীবাজার এলাকার মাহাবুব, জুয়েল, লিটন। এ সকল সোর্সরাই ফতুল্লার বিভিন্ন মাদক স্পট,ঝুট সন্ত্রাস,তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের হয়ে কাজ করে থাকে। সন্ত্রাসীদের তথ্য অনুয়ারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মিস গাইডের মাধ্যমে সাধারন মানুষকে হয়রানী করা থেকে শুরু করে নানা ভাবে ব্ল্যাক মেইলিং করে আসছে দীর্ঘদীন ধরে। এমনকি ফতুল্লা মডেল থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছে বলেও উঠেছে অভিযোগ।
ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকায় বসবাস সুরুজ্জামান ওরফে চায়না নামক এক সোর্সের বাড়ী। সোর্স চায়না দীর্ঘদীন ধরে ফতুল্লা থানা পুলিশ সদস্যদের সাথে সোর্সের কাজ করে আসছে। পুলিশের সাথে গভীর সখ্যতা থাকায় স্থাণীয় একাধিক মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিকভাবে সুবিধা নিয়ে আসছে দীর্ঘদীন ধরে। সোর্স সুরুজ্জামান ওরফে চায়নার চাহিদা মোতাবেক মাসোয়ারা না দিলে নানা ভাবে হয়রানী করারও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সোর্স চায়না নিজেও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদক ব্যবসা ছেড়ে বর্তমানে গার্মেন্টে কর্মরত এক ব্যাক্তি জানান, এক সময় সে মাদক বিক্রির সাথে জড়িত ছিল। এখন আর সে মাদক ব্যবসা করেন না। বিসিক এলাকায় অবস্থিত একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে। গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ সোর্স চায়না তার কাছে মাসোয়ারা দাবি করে। দাবিকৃত মাসোয়ারা দাবিকৃত অপরাগতা প্রকাশ করাসহ মাদক ব্যবসার সাথে সে জড়িত নয় দাবি করলেও নানা ভাবে সোর্স চায়না লোকটিকে ভয় দেখাচ্ছে। সোর্স সুরুজ্জামান চায়নার ভয়তে বর্তমানে ঐ লোকটি পলাতক রয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন।
এমনকি কথিত সোর্স জাহাঙ্গীর এবং সাথী নামের দুই সোর্স প্রতিপক্ষের লোকজনদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফতুল্লা মডেল থানার এস আই আমিনুলকে দিয়ে ব্যবসায়ী শামীম আহাম্মেদকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করান। এ সময় পুলিশ শামীমকে না পেয়ে শামীমের দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করলেও কোন ধরনের মাদক পাননি। তারপরেও এস আই আমিনুল শামীমের দুই বন্ধুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এবং ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছেড়ে দেন। এতেও ক্ষান্ত হননি এস আই আমিনুল। তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী পিচ্চি মিজানের কাছ থেকে কন্ট্রাক এর মাধ্যমে পাথর ব্যবসায়ী শামীমকে নানা ভাবে হয়রানী করছে। এস আই আমিনুলের অত্যাচারসহ মিথ্যা মামলার হুমকিতে এস আই আমিনুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে ফতুল্লার সর্বত্র। বর্তমানে ফতুল্লা থানার রাজত্ব সোর্সদে দখলেই বলা চলে। এদিকে ফতুল্লা মডেল থানার বিচক্ষন ওসি কামাল উদ্দিন থাকার পরেও পুলিশ সোর্সদের এমন অত্যাচার কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ফতুল্লাবাসী।
ফতুল্লাবাসী মনে করেন, পুলিশ সোর্সদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে পুলিশের ভাবমূতি ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনী এর জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যরাই। তাই বিতর্কিত উল্লেখিত সোর্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল উদ্দিন জানান, সোর্সদের বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তবে সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু সোর্সদের বিষয়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।